বৃহস্পতিবার, ০২ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৪৬ পূর্বাহ্ন
প্রেসবিজ্ঞপ্তি:
ইউএসএআইডি-এর অর্থায়নে ও সেভ দ্য চিলড্রেনে কারিগরি সহায়তায় এবং গ্রিন হিলের বাস্তবায়নে ‘আশ্রয় কেন্দ্র’ প্রকল্পের আওতায় মেরামত ও সংস্কারকৃত বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশপারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দুর্যোগ আশ্রয় কেন্দ্রটি আজ আনুষ্ঠানিকভাবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুনধুম ইউনিয়নের বাইশপারী গ্রামের এই সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ৪০০ জন দুর্যোগ আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার করতে সক্ষম হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ আতিকুল হক বলেন, “পার্বত্য অঞ্চলের একটি প্রত্যন্ত এলাকায় এই বিদ্যালয়টি অবশ্যই একটি দৃষ্টিনন্দন বিদ্যালয় হিসেবে পরিগণিত হবে। সেভ দ্য চিলড্রেনকে আমি অনুরোধ করবো এ ধরণের উদ্যোগ চলমান রেখে আরো অনেক বিদ্যালয়ের উন্নয়ন করতে”।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া আফরিন কচি বলেন, “বাইশপারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির সার্বিক উন্নয়নের কাজ শেষ করে সেভ দ্য চিলড্রেন আজ বিদ্যালয়টি আপনাদের হাতে তুলে দিচ্ছে। এটি খুবই প্রশংসনীয় উদ্যোগ, আমরা আশা করবো এমন কাজ ভবিষ্যতেও চলমান থাকবে”।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত বান্দরবান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ শফিউল আলম বলেন, “প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিভিন্ন বিদ্যালয় তৈরি করে দিচ্ছে এবং এই বিদ্যালয়গুলোকে দৃষ্টিনন্দন করে তুলতে সেভ দ্য চিলড্রেনের মত আরো অনেক সংস্থা এগিয়ে আসছে। আমার খুব ভালোলাগছে যে সেভ দ্য চিলড্রেন এবং গ্রিন হিল খুব সুন্দর করে বিদ্যালয়টির কাজ করে আজ আমাদের হাতে হস্তান্তর করছে। বিদ্যালয়টি যাতে এমনই সুন্দর করে রাখা যায় সে ব্যাপারে অভিভাবক এবং স্কুল ম্যানেজিং কমিটিকে খেয়াল রাখতে হবে”।
বাংলাদেশে সেভ দ্য চিলড্রেনের কান্ট্রি ডিরেক্টর ওনো ভ্যান মানেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিশুদের উদ্দেশ্য করে বলেন, “স্কুল ড্রেস পরা কিছু উৎসাহী চোখ দেখতে পাচ্ছি, তোমরা নিশ্চয়ই নতুনভাবে সজ্জিত তোমাদের এই বিদ্যালয়টি দেখে খুশি হয়েছ”।
উপস্থিত অন্যান্যদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে প্রায় এক বছর ধরে সমস্ত বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে এবং শিশুরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। গতকালই আমরা ‘সেফ ব্যাক টু স্কুল’ ক্যাম্পেইন শুরু করেছি কারণ আমরা চাই শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে ফিরে আসুক। আমরা এই বিদ্যালয়ে যথেষ্ট পরিমাণ হাইজিন এবং ওয়াস ফ্যাসিলিটি তৈরি করেছি কিন্তু এর ব্যবহার সম্পর্কে অবশ্যই শিশুদের জানাতে হবে। তা না হলে যত বেশি সংখ্যক ফ্যাসিলিটিই আমরা তৈরি করি না কেন, সেগুলো শিশুদের কোনো কাজেই লাগবে না”। এছাড়াও সেভ দ্য চিলড্রেন এবং ইউএসএআইডি-এর পক্ষে তিনি স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে পাওয়া সহযোগিতা এবং অনুপ্রেরণার কথা কৃতজ্ঞতার সাথে স্বরণ করেন।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোঃ শফিউল্লাহ বলেন, “আমরা অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করি, কিন্তু এত দরদ দিয়েও যে কাজ করা যায় সে দৃষ্টান্ত সেভ দ্য চিলড্রেন তৈরি করেছে। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে যাওয়ার পথে এ ধরণের কয়েকটি বিদ্যালয় আমি দেখেছি, আমার খুব ভালোলেগেছে”।
“বর্ডার এলাকা হওয়ায় সড়কপথে আসা বেশিরভাগ রোহিঙ্গারাই এই পথে প্রবেশ করেছে, যার ফলে আমার এই এলাকাটি অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্থ। আমি সেভ দ্য চিলড্রেনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই যে, যেহেতু সরকারে নির্দেশনায় স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্থ জনগোষ্ঠীর জন্য তহবিল রাখতে বলেছে তাই যেকোনো উন্নয়নমূলক প্রকল্প পরিকল্পনা করার সময় আমাদের এই এলাকাটিকে অগ্রাধিকার দিবেন”।
অনুষ্ঠানে সেভ দ্য চিলড্রেনের কক্সবাজার এরিয়া ডিরেক্টর, স্কুল পরিচালনা কমিটি, অভিভাবক শিক্ষক সমিতির সদস্য, ওয়ার্ড দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি সদস্য এবং স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকজনসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গও উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে বিশিষ্ট অতিথিরা বিদ্যালয় চত্বরে চারা রোপণ করেন।
ইউএসএআইডি-এর ‘আশ্রয় কেন্দ্র’ প্রকল্প তথা মাল্টি-পারপাস সাইক্লোন শেল্টার মেরামত ও সংস্কার কার্যক্রমের আওতায় সেভ দ্য চিলড্রেন বাইশপারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ কক্সবাজার ও বান্দরবানের ৪৬টি বিদ্যালয় মেরামত ও সংস্কারের কাজ করছে যার মধ্যে ২৩টি বিদ্যালয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পটি বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি পানি, স্যানিটেশন, বিদ্যুৎ, পেইন্টিং, শিশুবান্ধব আসবাব হস্তান্তর এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করছে। একই সাথে যেকোনও যেকোনো দুর্যোগে সময় অস্থায়ী আবাসন হিসেবেও যাতে এই বিদ্যালয়গুলি ব্যবহার করা যায় সেটিও নিশ্চিত করছে।
ভয়েস/আআ